শিরোনাম :
সাপ্তাহিক আলোর মনি পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। # সারাবিশ্বের সর্বশেষ সংবাদ পড়তে আমাদের সঙ্গেই থাকুন। -ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
বিএনপির কর্মী সভা অনুষ্ঠিত যতদিন নির্বাচন হবে না, ততদিন স্বাভাবিক অবস্থায় দেশে ফিরে আসবেনা-অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু আলু চাষ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন লালমনিরহাটের কৃষকেরা লালমনিরহাটে সরকার ফার্মেসী এর শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি (জিআর) চাল কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ মিষ্টি আলু চাষে লালমনিরহাটের কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে লালমনিরহাটে সাংবাদিকের পিতা কাশেম আলীর ইন্তেকাল পরিচ্ছন্ন রাজনীতি বুকে ধারণের মাধ্যমে আমরা স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে পারবো-লালমনিরহাটে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী লালমনিরহাটে তুলার চাষে লাভের মুখ দেখছে কৃষেকরা লালমনিরহাটে কর্মসৃজন কর্মসূচি শুরু না হওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন কর্মহীনরা
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর আগমনের ৫৩বছর পূর্তি উদযাপন

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর আগমনের ৫৩বছর পূর্তি উদযাপন

লালমনিরহাটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর লালমনিরহাট আগমনের ৫৩বছর পূর্তি উদযাপন (১৯৬৯-২০২২) উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র‌্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 

রোববার (৯ অক্টোবর) সকাল ৯টায় লালমনিরহাটের সাপটানা বাজারস্থ আবুল এমপি’র ঐতিহাসিক পাটের গুদাম প্রাঙ্গণে স্মৃতি উদযাপন পরিষদ ২০২২ লালমনিরহাটের বাস্তবায়নে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন পরিষদ ঢাকার আয়োজনে এ ৫৩ বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠিত হয়।

 

সকাল ৯টা ৩০মিনিটে গোশালা রোড হয়ে রেল স্টেশন অভিমুখে পদযাত্রা এবং সাহেবপাড়া, মোগলহাট, কালীবাড়ী, সাপটানা রোড ধরে একই স্থানে এসে শেষ হয়।

 

র‌্যালী শেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আবুল হোসেন এমপি’র প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ অনুষ্ঠিত হয়।

 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব শহীদান এবং আবুল হোসেনের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত করেন আলহাজ্ব মাওলানা জালাল উদ্দিন।

 

সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

 

পরে ছয় ভাগে বিভক্ত হয়ে সুনির্দিষ্ট ভাবে আসন গ্রহণ করা হয়।

 

সকাল ১১টা ৩০মিনিটে স্বাগত ভাষণ দেন স্মৃতি উদযাপন পরিষদের আহবায়ক নজরুল হক পাটোয়ারী ভোলা।

 

“বৈভবে একাত্তর” লালমনিরহাট সফর একটি প্রামাণ্য বিশ্লেষণ থেকে অংশ বিশেষ পাঠ দিয়ে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন সদস্য সচিব কবি নিশি কান্ত রায়।

 

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে অংশ বিশেষ পাঠ মাধ্যমে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন যুগ্ম আহবায়ক কবি ফেরদৌসী বেগম বিউটি।

 

শুভেচ্ছা কথা বলেন উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য প্রফেসর মোঃ হামিদুল হক।

 

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের (ঐক্য) ভাষণের অংশ বিশেষ পাঠ করেন ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র মোঃ অর্জন।

 

প্রতক্ষ্যদর্শীদের স্মৃতি চারণ করেন ইউনুস শিকদার, মহিউদ্দিন ভূঁইয়া, শাহজাহান মিয়া, জেলাল শফি, ওবায়দুর রহমান, আব্দুল মজিদ মন্ডল প্রমুখ।

 

আবৃত্তি করেন কাজল, ঐশী, মোহনা, প্রকৃতি, তুলি, তমা, লাবিব প্রমুখ।

 

আলোচনা করেন সদস্য আহসান কামাল চৌধুরী সোহাগ, যুগ্ম আহবায়ক রিয়াজুল ইসলাম রিন্টু, রেজাউল করিম স্বপন, উপদেষ্টা অ্যাড. মতিয়ার রহমান প্রমুখ।

 

পরে জাগরণের গান পরিবেশন হয়।

 

এ সময় লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোঃ আবু জাফর, সাপ্তাহিক আলোর মনি পত্রিকার সম্পাদক মোঃ মাসুদ রানা রাশেদসহ শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রীসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

 

প্রসঙ্গত, ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান সরকার দেশের অখগুতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান এবং অন্যান্য-মামলা’ (আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা) দায়ের করে। কিন্তু প্রবল জনবিক্ষোভের মুখে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এ মামলা প্রত্যাহার করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল কারাবন্দিকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯ তারিখে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক বিশাল জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমানসহ মামলায় অভিযুক্তদের গণসংবর্ধনা দেয়া হয়। এ দিনে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তৎকালীন ডাকসু ভিপি এবং সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক তোফায়েল আহমেদ বঙ্গবন্ধুকে এ উপাধিতে ভূষিত করেন।

 

১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে উঠেছেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা। জনতার উত্তাল দাবির মুখে ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান পদত্যাগ করেন। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব সেনা বাহিনী প্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খানের কাছে দেশের অবস্থা সামাল দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন বলে রেডিও-টেলিভিশনের মাধ্যমে জানান। ইয়াহিয়া খান ঐ দিন দুপুর দুইটায় নিজেকে দেশের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে ঘোষণা দেন এবং রাতে নিজেকে দেশের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেন। ক্ষমতার পালাবদল হলেও বাঙালিদের উপর দমন নিপীড়ন অব্যাহত থাকে।

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারাগার থেকে মুক্তিলাভের পর দলকে সুসংগঠিত করা এবং জনগণকে আগামীর লড়াই সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত করতে দেশব্যাপী গণসংযোগ শুরু করেন। সফরের এক পর্যায়ে ১৯৬৯ সনের অক্টোবর মাসে তিনি বগুড়া, গাইবান্ধা, রংপুর, বদরগঞ্জ, লালমনিরহাট, নীলফামারী, সৈয়দপুর ও দিনাজপুর সফর করেন। সামরিক আইন জারি থাকায় প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচির উপর নিষেধাজ্ঞার কারণে তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে গৃহাভ্যন্তরে বা মিলনায়তনে কর্মীসভায় অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু কোটি মানুষের প্রাণের নেতার আগমনে মানুষের মধ্যে উত্তাল জোয়ারের সৃষ্টি হয়। জনতার স্রোতে সামরিক শাসনের বিধিমালা ভেঙ্গে প্রায় প্রতিটি স্থানে কর্মীসভাগুলোর ঘরোয়া চরিত্র পরিবর্তিত হয়ে জনসভার রূপ নেয়।

 

দেশের উত্তরাঞ্চলে সফরের এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু লালমনিরহাটে এলে স্থানীয় সাপটানা বাজারে আবুল হোসেনের পাটের গুদামে একটি কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়। দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার ৯ অক্টোবর ১৯৬৯। তখন চলছিল ইয়াহিয়া খানের সামরিক শাসন। স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পতন ঘটে ১৯৬৯ সালের ২৫মার্চ। ৮ অক্টোবর ১৯৬৮ গাইবান্ধা থেকে তিনি রংপুরে এসে স্থানীয় আর্ট কাউন্সিল হলে ছাত্রদের সাথে একটি সভা করেন। রাতে তিনি রংপুরের কলেজ রোডে অবস্থিত ওয়াপদা রেস্ট হাউজে অবস্থান করেন। ৯ অক্টোবর ভোর ৬টায় তিনি বদরগঞ্জের ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা দুর্গত এলাকায় ছুটে গিয়েছেন। বদরগঞ্জ থেকে সকাল সাড়ে ন’টায় ট্রেন যোগে লালমনিরহাটের দিকে যাত্রা শুরু করেছিলেন। এদিন সকাল সাড়ে দশটায় তিনি লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছুলেন। রেলস্টেশনে ট্রেনের কামরা থেকে হাসিমুখে নেমে এলেন এক দীর্ঘদেহী বাঙালি পুরুষ। কী বিশাল শালপ্রাংশু দেহ। ট্রেন থেকে নেমে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে তিনি হাত নাড়লেন। রেলওয়ে রিক্সাস্ট্যান্ডে অপেক্ষমাণ বিপুল সংখ্যক মানুষ। আবুল হোসেনসহ নেতা-কর্মীরা ছুটে এসে তাঁকে বিপুলভাবে মালাভূষিত করলেন। তখন লালমনিরহাটে ফুলের সমারোহ ছিল না। তাই এ মালাগুলোর বেশিরভাগই ছিল কাগজের মালা। পায়ে হেঁটে রেলওয়ে রিক্সাস্ট্যান্ডে এসে আবারও হাসিমুখে জনতার উদ্দেশ্যে হাত নাড়লেন।

 

তখন লালমনিরহাটে কোন ব্যক্তিগত মোটরযান ছিল না। যাতায়াতের একমাত্র বাহন রিক্সা। বঙ্গবন্ধু রিক্সায় বসে সাহেব পাড়া হয়ে কালীবাড়ি রেলগেট পার হয়ে যখন সাপটানা বাজারের গুদামের সামনে এলেন তখন গোটা সাপটানা রোড লোকে লোকারণ্য। সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে তখন প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ। অবাঙালিরা তখন লালমনিরহাট শহরে দাপিয়ে বেড়ায়। এদের ক্ষমতা, অর্থ, বিত্ত ও দাপটে সংখ্যাগুরু বাঙালিরা কোনঠাসা। বঙ্গবন্ধুর লালমনিরহাট সফর নিয়ে বিহারিরা বেশ অস্বস্তিতে ভুগছিল। শুরু করে নানান ষড়যন্ত্র। সভা করার জন্য রেল কর্তৃপক্ষের কাছে এমটি হোসেন ইনস্টিটিউট বা অফিসার্স ক্লাব বরাদ্দের জন্য আওয়ামী লীগ নেতারা হন্যে হয়ে ঘুরে ব্যর্থ হন। এ অবস্থায় লালমনিরহাট থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে আবুল হোসেন বেশ ঝুঁকি নিয়ে তাঁর পিতা লালমনিরহাটে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব কছিম উদ্দীন আহাম্মদ মাস্টারের পূর্ব পাশের পাটের গুদামে কর্মীসভার আয়োজন করেন। গুদাম চত্ত্বরের মাঝ বরাবর কয়েকশত ঢেউটিন আর বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হল অস্থায়ী পার্টিশন। দিন রাত একাকার করে আবুল হোসেনের সাথে কাজ করলেন আওয়ামী লীগের হজরত আলী, ফয়েজ আহাম্মদ চুন্নু মিয়া, শাহ আলম, মাহফুজার রহমান খোকন, কাজী মোসলেহ উদ্দীন, আবু তালেব, ডা. নজরুল ইসলাম, ছাত্রলীগের ইলিয়াস হোসেন, শহীদুল্লাহ, মাহবুবার রহমান লাভলু, মনোয়ারা বেগম, কুদরাত ই খুদা জিন্নাহসহ শত শত নেতা-কর্মী। রাতের বেলা হ্যাজাক লাইট জ্বালিয়ে। কাঠের চৌকি দিয়ে মঞ্চ নির্মাণ করা হল সাপটানাস্থ পাটের গুদামের ভেতরে। কর্মীদের বসার জন্য কয়েকটি গরুর গাড়িতে আনা হল শুকনো খড়। খড়ের উপর ত্রিপল বিছিয়ে কয়েকশত মানুষের বসার ব্যবস্থা করা হল।

 

বঙ্গবন্ধু তখন বাংলার অবিসংবাদিত নেতা হয়ে উঠেছেন। হাজার হাজার মানুষ তাদের প্রিয় মুজিব ভাইকে এক নজর দেখতে জমায়েত হয়েছেন সাপটানার পাট গুদামের সামনের প্রশস্ত পাকা রাস্তায়। বঙ্গবন্ধু সভাস্থলে পৌঁছুলে কাঠের চাকা লাগানো মূল গেট বন্ধ করে দেয়া হল। কর্মী-পাশ’ ছাড়া সাধারণের ভেতরে প্রবেশাধিকার নেই। বঙ্গবন্ধু পূর্ব গুদামের দক্ষিণ প্রান্তে কয়েকটা কাঠের চৌকি দিয়ে বানানো মঞ্চে রাখা চেয়ারে উপবেশন করলেন। গুদামটির উপরে টিনের চালা ও তিন দিকে টিনের বেড়া দেয়া। শুধুমাত্র পশ্চিম দিকটা খোলা যা অস্থায়ীভাবে টিনের পার্টিশন দিয়ে ঘরোয়া পরিবেশ তৈরি করা হয়েছ।

 

গুদামের ভেতরে গিজ গিজ করছে শত শত কর্মী। প্রচণ্ড গরমে ঘামছেন সবাই। ভেতরে আলোর স্বল্পতা দূরীকরণে ঝোলানো হ্যাজাক লাইট ব্যবহার করা হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন। তিনি সে সময় একই সাথে কুড়িগ্রাম মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

 

মঞ্চের দুদিকে ঘটঘট করে দুটো স্ট্যান্ড ফ্যান ঘুরছিল। তখন লালমনিরহাটে শুধুমার রেলওয়ে পাওয়ার হাউজ থেকে কিছু বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। রেলওয়ে ডিভিশনের বড় সাহেবদের ব্যবহারের এ ফ্যানগুলো রেল শ্রমিক লীগের নেতারা বঙ্গবন্ধুর জন্য নিয়ে এসেছিলেন। গুদামের টিনের বেড়ার বাইরে লোকে লোকারণ্য। বাইরে হাজার হাজার মানুষের গগনবিদারী শ্লোগান। তারা বঙ্গবন্ধুকে এক নজর দেখতে চান। তাদের স্লোগানের শব্দে কর্মীসভা চালানোই দুষ্কর হয়ে পড়ে। টিনের বেড়ার বাইরে অপেক্ষমাণ জনতা একসময় টিনের বেড়া পরে ধাক্কাধাক্কি শুরু করলে বঙ্গবন্ধু টিনের বেড়ার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে তাঁর পাশের চেয়ারে বসা আবুল হোসেনকে জলদ গম্ভীর স্বরে নির্দেশ দিলেন-

-আবুল, টিনের বেড়া সরিয়ে দে। মানুষকে আসতে দে। আর কোথায় থাকে। শত শত মানুষ বঙ্গবন্ধুর এ নির্দেশনা শোনামাত্রই মুহূর্তের মধ্যে টিনের বেড়া নিজ দায়িত্বে ভেঙে ফেলে বন্যার জলের মতো সভাস্থলে প্রবেশ করলো। কর্মীসভার আর ঘরোয়া রূপ থাকলো না। পরিণত হলো জনসভায়। জনতা স্থির হলে বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা দিলেন। এ সভায় বঙ্গবন্ধু বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। মন্ত্রমুগ্ধের মতো জনতা তাঁর কথা শুনলেন। কোন আইন গণমানুষের নেতাকে আর তাঁদের থেকে আলাদা রাখতে পারলো না। মানুষের হৃদয়ের কাছে আসন পেতে নিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। সভা শেষ করে বঙ্গবন্ধু পায়ে হেঁটে গেলেন রাস্তার ওপারেই আলতামাস মিয়া (ওরফে আলতু মিয়া)’র বাড়িতে। আলতু মিয়া আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং তার বাড়ির রান্নার সুখ্যাতি ছিল। ওই বাড়িতে একটা টিনের চৌচালা ঘরে তিনি দুপুরের খাবার গ্রহণ করলেন।
প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায় ০৯ অক্টোবর ১৯৬৯ লালমনিরহাটে দুপুরের খাবার গ্রহণ করেই বেলা দুটায় বঙ্গবন্ধু ট্রেনযোগে রংপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।

 

রংপুরে পৌঁছে তিনি বিকাল ৪টায় স্থানীয় আর্ট কাউন্সিল হলে আয়োজিত কর্মীসভায় যোগদান করেন। এ সভার কোন প্রামাণিক তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। তবে ০৮/১০/১৯৬৯ তারিখে তিনি ছাত্রদের নিয়ে যে সভা করেছিলেন সে সম্পর্কে প্রামাণিক তথ্য পুলিশের বিশেষ শাখার গোপনীয় প্রতিবেদনে পাওয়া যায়। এ প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু ৮/১০/১৯৬৯ তারিখে বিকালে স্থানীয় আর্ট কাউন্সিল হলে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ রংপুর জেলা শাখার সভাপতি আবদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় যোগদান করেন। এ সভায় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের প্রায় ৭০০জন কর্মী উপস্থিত ছিলেন। সভায় পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবদুর রউফ ছাত্রদের ভূমিকা ও আওয়ামী লীগের ৬দফা কর্মসূচির উপর বক্তব্য প্রদান করেন। শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর বক্তৃতায় বিগত সরকারের সমালোচনা করে বলেন যে, তারা (পাকিস্তানী শাসকরা) পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে দরিদ্র থেকে চরম দরিদ্রে পরিণত করেছে। তারা (পাকিস্তানী শাসকরা) ১৯৫৬ সনের দ্রুত কমিশনের সুপারিশ অবজ্ঞা করে বন্যা নিয়ন্ত্রণের কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাই। তিনি ১৯৫৬ সনের সংবিধান নিয়ে টালবাহনার কথা বলেন । একই সাথে তিনি দলের মধ্যে যারা ধর্ম নিয়ে এসে দেশে নির্বাচন বানচাল করতে চায় তাদের বিষয়ে দলীয় কর্মীদের সতর্ক থাকতে বলেন।

 

৯ অক্টোবর ১৯৬৯ লালমনিরহাট থেকে ট্রেনযোগে রংপুরে পৌঁছে তিনি বিকাল ৪টায় স্থানীয় আর্ট কাউন্সিল হলে আয়োজিত কর্মীসভায় যোগদান করেন। সভাশেষে তিনি রংপুরে রাত্রিযাপন করেন। পরদিন ১০ অক্টোবর ১৯৬৯ শুক্রবার সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু সড়কপথে রংপুর থেকে সৈয়দপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। তিনি সকাল জটায় সৈয়দপুরে একটি সংক্ষিপ্ত কর্মীসভায় যোগদান করেন। সভাশেষে সকাল ১০টায় তিনি সড়কপথে নীলফামারীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু নীলফামারী পৌঁছেই একটি কর্মীসভায় যোগ দেন। বিকাল ৩টায় তিনি সড়কপথে দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন




এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
Design & Developed by Freelancer Zone